তাপদাহ কী? কি এর পরিচয়? এ হতে বাচার উপায় কী কী হতে পারে?!

বর্তমানে বাংলাদেশকে গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়।  বর্তমানে এখানে তাপদাহ যেন একটি সাধারণ ঘটনা। আসলে তাপদাহ হল একটি আবহাওয়াগত পরিস্থিতি যেখানে দীর্ঘ সময় ধরে অত্যধিক উচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করে। এটি সাধারণত গ্রীষ্মকালে ঘটে এবং মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাপদাহের সময় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সাধারণত ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হয় এবং এটি কয়েকদিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

তাপদাহের বৈশিষ্ট্য
১)উচ্চ তাপমাত্রা: তাপদাহের সময় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা অত্যধিক বৃদ্ধি পায়।
২)দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা: তাপদাহ কয়েকদিন থেকে শুরু করে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
৩)রাতের তাপমাত্রা: তাপদাহের সময় রাতের তাপমাত্রাও অনেক বেশি থাকে, যা মানুষের ঘুম এবং বিশ্রামে বিঘ্ন ঘটায়।
৪) আর্দ্রতা: উচ্চ তাপমাত্রার পাশাপাশি আর্দ্রতার মাত্রা কম বা বেশি হতে পারে, যা তাপদাহের প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

তাপদাহের কারণ
বাংলাদেশে তাপদাহের কারণসমূহ নিম্নরূপ:
১)ভৌগোলিক অবস্থান: বাংলাদেশ ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এখানে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশি হয়ে থাকে।
২)আবহাওয়াগত প্রভাব: এল নিনো এবং লা নিনা প্রভাবের ফলে আবহাওয়ায় পরিবর্তন আসে যা তাপদাহ সৃষ্টি করে।
৩)বনায়ন হ্রাস: দ্রুত নগরায়ন এবং বন ধ্বংসের কারণে হ্রাস পাচ্ছে সবুজায়ন যা তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
৪)বায়ু দূষণ: শিল্প কারখানা এবং যানবাহনের ধোঁয়া বায়ুর গুণমান হ্রাস করে, ফলে উষ্ণতা বাড়ে।

তাপদাহের প্রভাব
তাপদাহের প্রভাব সমূহ নিম্নরূপ:
১)স্বাস্থ্যগত প্রভাব: তাপদাহের কারণে হিটস্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়।
২)খাদ্য উৎপাদন: উচ্চ তাপমাত্রার কারণে ফসল উৎপাদন কমে যায়।
৩)পানিসম্পদ: তাপদাহের কারণে জলাশয়ের পানি শুকিয়ে যায়, ফলে পানির সংকট দেখা দেয়।
৪)বন্যপ্রাণী: তাপদাহ বন্যপ্রাণীদের জীবনধারণে প্রভাব ফেলে।

তাপদাহ মোকাবেলার উপায়
তাপদাহ মোকাবেলার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
১)বৃক্ষরোপণ: বেশি বেশি গাছ লাগানো যা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
২)বৈজ্ঞানিক চাষাবাদ: উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন বাড়ানো।
৩)জল সংরক্ষণ: জলাশয় সংরক্ষণ ও পুনর্ভরণ করার মাধ্যমে জল সংরক্ষণ করা।
৪)স্বাস্থ্য সেবা: তাপদাহের সময় পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা।

সরকারী উদ্যোগ
বাংলাদেশ সরকার তাপদাহ মোকাবেলায় কিছু উদ্যোগ নিয়েছে:
১)সচেতনতা বৃদ্ধি: জনসাধারণকে তাপদাহের প্রভাব ও করণীয় সম্পর্কে সচেতন করা।
২)পুনর্বনায়ন প্রকল্প: বিভিন্ন বনায়ন প্রকল্প গ্রহণ করা।
৩)আবহাওয়ার পূর্বাভাস: উন্নত আবহাওয়া পূর্বাভাস ব্যবস্থা স্থাপন করা।

এছাড়া, আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও তাপদাহ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তাপদাহের প্রভাব কমানো সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *