কর ফাঁকির ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ক্ষতি: কারণ ও প্রতিকার

বাংলাদেশে কেনাকাটার ক্ষেত্রে ট্যাক্স না দেয়ার প্রবণতা একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে পণ্য ও সেবা ক্রয় করেন, যা দেশের অর্থনীতিতে নানামুখী সমস্যার সৃষ্টি করে। কর ফাঁকির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী কী ক্ষতি হচ্ছে এবং এর প্রতিকার কী হতে পারে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

কর ফাঁকির কারণে সৃষ্ট ক্ষতি:
১. সরকারের রাজস্ব আয় হ্রাস:
ট্যাক্স হল সরকারের প্রধান আয়ের উৎস। যখন জনগণ ট্যাক্স প্রদান থেকে বিরত থাকে, তখন সরকারের রাজস্ব আয় কমে যায়। এর ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন ইত্যাদি খাতে সরকারের পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করা সম্ভব হয় না।

২. উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়নে ব্যাঘাত:
সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পগুলির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দিতে হয় মূলত ট্যাক্স থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব দিয়ে। কর ফাঁকি দেওয়ার ফলে এই প্রকল্পগুলির বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়, যা দেশের সার্বিক উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।


৩. অসম প্রতিযোগিতা:
যেসব ব্যবসায়ীরা ট্যাক্স প্রদান করেন না, তারা ট্যাক্স প্রদানকারী ব্যবসায়ীদের তুলনায় অসাধু প্রতিযোগিতার সুযোগ পান। এর ফলে সৎ ব্যবসায়ীরা বাজারে টিকতে কষ্ট পায় এবং অনেক সময় ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।


৪. সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধি:
কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা সমাজের ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এর ফলে গরীব ও সাধারণ জনগণ আরও অসুবিধার সম্মুখীন হয়। ট্যাক্স ব্যবস্থার মাধ্যমে সামাজিক সেবা প্রদান ও পুনর্বণ্টনের সুযোগ হারিয়ে যায়।

৫. আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ:
একটি দেশের অর্থনৈতিক সুশাসন ও স্বচ্ছতা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কর ফাঁকির উচ্চ হার দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে বাধা সৃষ্টি করে।

প্রতিকার ও সুপারিশ:

১. জনসচেতনতা বৃদ্ধি:
কর ফাঁকির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালানো উচিত। মিডিয়া, সামাজিক মাধ্যম ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণকে ট্যাক্স প্রদান করতে উৎসাহিত করা যায়।

২. ট্যাক্স ব্যবস্থা সহজ ও স্বচ্ছ করা:
ট্যাক্স প্রদানের প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ করতে হবে। অনলাইনে ট্যাক্স প্রদানের সুবিধা বৃদ্ধি করে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য ও সহায়তা প্রদান করে জনগণকে ট্যাক্স দিতে উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে।

৩. কর নিরীক্ষা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা জোরদার করা:
কর নিরীক্ষা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। যারা ট্যাক্স ফাঁকি দেয়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যাতে অন্যরা এ থেকে শিক্ষা নেয়।

৪. সরকারি সেবা ও সুবিধার উন্নয়ন:
জনগণকে বোঝাতে হবে যে, ট্যাক্স প্রদানের মাধ্যমে তারা সরাসরি সরকারি সেবা ও সুবিধা পাচ্ছেন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিরাপত্তা ইত্যাদি খাতে উন্নয়ন হলে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ট্যাক্স দিতে আগ্রহী হবে।

৫. প্রণোদনা প্রদান:
যারা নিয়মিত ট্যাক্স প্রদান করেন, তাদের জন্য প্রণোদনা ও সুবিধা প্রদান করা যেতে পারে। যেমন, ট্যাক্স প্রদানে ছাড়, পুরস্কার বা সম্মাননা প্রদান করা যেতে পারে।

সার্বিকভাবে, কর ফাঁকির প্রবণতা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুতর ক্ষতি করছে। এজন্য সরকারের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের সচেতনতা ও দায়িত্বশীল আচরণ প্রয়োজন। ট্যাক্স প্রদান করে দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *